IQNA

ব্রিটিশ শঠতা ও ধূর্তামির মূর্ত্য প্রতীক : টমেটো গরীব মানুষের আপেল ( Tomato is poor men's apple ) !  

14:18 - November 15, 2023
সংবাদ: 3474652
তেরহান (ইকনা): গতকাল মঙ্গলবার (১৪ -১১-২০২৩ ) ইরানের কোমে সে শানবে বাজারে ( মঙ্গলবার হাট )  লাল মিষ্টি আপেল ছিল কে.জি ১৫০০০ তূমান এবং টমেটো ছিল ২৫০০০ তূমান । 

তাহলে এখন ইরানের ক্ষেত্রে Tomato is poor men's apple  ব্রিটিশ প্রবর্তিত তথাকথিত বৈজ্ঞানিক এ প্রবাদ বাক্যটা কি খাটবে এবং ঠিক ও প্রযোজ্য হবে? নাকি ইরানের ক্ষেত্রে এখন বলতে হবে : Apple is poor men's tomato ? !!!! ( আপেল গরীব মানুষের টমেটো ) । ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ যা প্রায় ৩০০ বছর ধরে ক্ল্যাসিক্যাল লিবেরালিজম ও ধনতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল তা দুনিয়া জুড়ে সূর্যাস্ত না যাওয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বের সম্পদ লুটপাট করে এনে ব্রিটেনে ধনকুবেরদের সম্পদের পাহাড় গড়লেও ঐ দেশের ( ব্রিটেন ) সাধারণ মানুষ ( The British Common People ) তীব্র দারিদ্র্যের কারণে মহারানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে আপেল ঠিকমতো কিনে খেতে পারত না বলেই চতুর শৃগালসদৃশ ব্রিটিশ সরকার স্বীয় জাতিকে এ ভাবে তথাকথিত বৈজ্ঞানিক এ প্রবাদ বাক্যটির প্রসার ঘটিয়ে বুঝ ও ধোঁকা দিয়েছে যে দারিদ্র্যের কারণে আপেল কিনে খেতে না পারলে দু:খ করো না তোমাদের জন্য তো সস্তা মূল্যের টমেটো আছে । অতএব টমেটো খাও । টমেটোই গরীব মানুষের আপেল ( Tomato is poor men's apple ) !! এরপর ব্রিটিশ সরকার বেতন ভুখ তথাকথিত বিজ্ঞানীদের ( বিশেষ করে পুষ্টি বিজ্ঞানীদের) দিয়ে " পুষ্টি মানের দিক থেকে টমেটো আপেলের চেয়ে নাকি শ্রেষ্ঠ " - এটা প্রথমে ব্রিটেনে পরে ব্রিটিশ শাসিত কলোনি গুলোতে প্রকাশ ও প্রচার করতে থাকে এবং ভারতবর্ষে বিশেষ করে আমাদের দেশেও ( বাংলাদেশ ) বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল চতুর শৃগালসদৃশ ব্রিটিশ রাজের শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষাবিদরা । তাই আমরা ছোটবেলায় বিজ্ঞানের বইতে এই বৈজ্ঞানিক প্রবাদ বাক্যটি পড়েছি এবং যপেছি : Tomato is poor men's apple !!! তখনই এর সত্যতা ও যথার্থতা নিয়ে মনে খটকা লাগত । কারণ কোথায় সুঘ্রাণ , সুমিষ্ট ও সুস্বাদু আপেল , আর কোথায় টমেটো যেন ধরা ও সরার ব্যবধান !!! কিন্তু কী আর করার ?!! তখনকার তথাকথিত বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের শিরোমণি ও অগ্রপথিক ব্রিটেনের দান হচ্ছে দেব বাক্য সম এ প্রবাদ বাক্য বা স্তুতি ( Tomato is poor men's apple ) যা শিরধার্য্য । 
ইরানে আপেল ও টমেটোর মূল্যের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাসায় অতিথি এলে কী করবে ইরানীরা : আপেল পরিবেশন করবে না টমেটো দিয়ে মেহমানকে আপ্যায়ন করবে ? কারণ সবচেয়ে দামী জিনিস বা ফল দিয়েই তো মেহমান আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে !!! সমাধান কি এটা হতে পারে যে  গরীব ইরানীরা অতিথি আপ্যায়ন করবে আপেল দিয়ে ; কারণ তা সস্তা এবং ধনী ইরানী রা অতিথি আপ্যায়ন করবে টমেটো দিয়ে ? ! কারণ টমেটো এখন মাঙ্গা ( বেশি দামী ) ।
প্রসঙ্গত : উল্লেখ্য যে ইরান ও ব্রিটেনে আপেল ও টমেটো উভয়ই উৎপাদিত হয় । কিন্তু বাংলাদেশে শুধু টমেটোই উৎপাদিত হয় আপেল হয় না । বাংলাদেশে  আপেল আমদানি কৃত ফল হওয়ায় সব সময় তা দামী । তাই অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ প্রবাদ বাক্যটি ( টমেটো গরীব মানুষের আপেলের) বাংলাদেশের ক্ষেত্রে খাটে ও ঠিক আছে । কিন্তু এ প্রবাদ বাক্য ইরান ও ব্রিটেনের ক্ষেত্রে ঠিক হবে ? শীত মৌসুমে ইরানে আপেল টমেটোর চেয়ে সস্তা । কারণ শীতকালে ইরানে আপেল উৎপন্ন হয় এবং টমেটোর ফলন অনেক হ্রাস পায়। ব্রিটেনেও শীতেই আপেল আসে ( যদিও এখন বিশ্বায়নের যুগে সারা বছর ধরে আপেল পাওয়া যেতে পারে । তবে দেশী আপেলের দাম আমদানি কৃত বিদেশী আপেলের চেয়ে নি: সন্দেহে সস্তা ।  ) এবং ১২৩ বছর আগে মহারানী ভিক্টোরিয়ার যুগে ব্রিটেনে শীতেই আপেল উৎপন্ন হত । কিন্তু এ সময় ব্রিটিশদের বাড়ীতে মেহমান আসলে কী দিয়ে আপ্যায়ন করত তারা ? শীত কালে ধনীরা তো আপেল দিয়ে করবেই কিন্তু গরীব ব্রিটিশরা কি শীতকালে আপেলের মৌসুমেও টমেটো দিয়েই অতিথি আপ্যায়ন করত ?!!!  ব্রিটেনে গরীব মানুষের কাছে ব্রিটিশ সরকারের প্রবর্তিত ঐ প্রবাদ অনুযায়ী টমেটো গরীব মানুষের আপেল !!! 
পুষ্টিগুণ ও মান এবং তথাকথিত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির চেয়েও ব্রিটিশ রাজ প্রবর্তিত এ প্রবাদ বাক্যের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। যা হোক আমাদের দেশের তথাকথিত পাশ্চাত্য বিশেষ করে ব্রিটিশ প্রভাবিত বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদরা ব্রিটিশ প্রবর্তিত এ প্রবাদ বাক্যটি বা বৈজ্ঞানিক দেব স্তুতি বাক্যটি অবলীলায় অজান্তে নাকি জেনেশুনে বিজ্ঞানের বইতে ঢুকিয়ে দিয়েছিল  যা আমরা ছোট বেলায় পড়েছি । কিন্তু খটকা মনের মধ্যে ছিল। কোনো দিন অসার এ প্রবাদ বাক্যের মর্মবাণী মেনে নিতে পারি নি । পাঠকের এ ব্যাপারে অভিমত কী অনুগ্রহ করে জানাবেন । এ প্রবাদ বাক্য থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্বর্ণোজ্জ্বল যুগে অর্থাৎ যে সময় এ বিশাল সাম্রাজ্যে সূর্য অস্ত যেত না ঠিক সেই যুগে ( কুইন ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে ) ব্রিটেনের ব্রিটিশ সমাজে চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রতীয়মান হয়ে যায় । ব্রিটিশ রাজ শাসিত ও শোষিত কলোনি গুলো তো দূরে থাক খোদ ব্রিটেনের ব্রিটিশ সমাজেও ব্রিটিশ রাজ অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও বৈষম্য যে দূর করতে পারে নি তার প্রমাণ সায়েন্টিফিক এ প্রবাদ বাক্য : Tomato is poor men's apple. !! 
প্রবাদ বাক্যটিতে  Poor men অর্থাৎ দরিদ্র গরীব মানুষ সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। আর এটাই দেখিয়ে দেয় সমগ্র বিশ্ব শাসন ও শোষণকারী ব্রিটেনের তদানীন্তন সমাজে চরম অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সাধারণ ব্রিটিশ জনগণের চরম দারিদ্র্য যার জন্য ঠিক মতো আপেল কিনে খাওয়ার সামর্থ্য তাদের ছিল না । আর ইরানে সবসময় তখন এবং এখনো আপামর জনসাধারণ ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে আপেলের মৌসুমে আপেল খেতে পারে। তাই এখানে তথাকথিত ঐ প্রবাদ বাক্যটি স্কুলের বিজ্ঞানের বইতে ঢোকানো হয় নি । আর আগেই বলেছি বাংলাদেশে যেহেতু আপেল আমদানি কৃত আইটেম হওয়ায় তা সব সময় ছিল দামী এবং গরীব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ছিল ও আছে । অতএব বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হয়তো এ প্রবাদ বাক্যের অর্থনৈতিক গুরুত্ব থাকতে পারে। আর ব্রিটিশ শাসনের আগে  বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ গুলোর অন্তর্ভুক্ত তখন হয়তো আপেল কিনে খাওয়ার অসুবিধা ছিল না । সেব্ ( سیب ) ফলের নাম শোনা যায় । এই সেব ( ইরানে উচ্চারিত হয় সীব্ ) আসলে আপেলের ফারসী নাম । ভারত তথা বঙ্গবাসীদের জন্য ইংরেজ বা ব্রিটিশ শাসনের শ্রেষ্ঠ উপহার হচ্ছে দারিদ্র্য । আর ব্রিটিশদের শোষণে দারিদ্রের প্রাদুর্ভাব হওয়ায় বঙ্গদেশে না হয় এ প্রবাদ খাটে । কিন্তু শিল্প , জ্ঞান - বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথিকৃৎ একশো বছর আগে বিশ্বের দৌর্দণ্ড প্রতাপশালী ১নং ধনী ও ১নং পরাশক্তি ব্রিটেনে কেন দারিদ্রের কারণে সাধারণ ব্রিটিশ জনগণের আপেল কিনে খাওয়ার আর্থিক সামর্থ্য ছিল না ? সমগ্র বিশ্ব তো ব্রিটেন লুট পাট করে খেয়েছে । তারপরও কেন নিজেদের জনগণের দারিদ্র ব্রিটেন ঘুচাতে পারে নি । দুনিয়া শোষণ করে ব্রিটেনে আনা সম্পদ কাদের পেটে গেছে ? তা আসলে রাজা - রাণী , আর্ল্ কার্ল্ টার্ল্ ফার্ল্ , ডিয়ুক ফিয়ুক , লর্ড - ফর্ড্ , কাউন্ট ফাউন্ট ও ধনী - টনী শ্রেণীর পেটেই গেছে । এই হলো ব্রিটেনের গণতন্ত্র , ধনতন্ত্র ও ক্ল্যাসিকাল লিবেরেলিজম । আসলে কীভাবে গণতন্ত্র ও ধনতন্ত্র খাপ খায় ? এ দুটো হচ্ছে পরস্পর বিপরীত । যা হোক এ কারণেই তো ব্রিটেনে তথাকথিত গণতন্ত্র থেকেও সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা জাতি সমূহকে হত্যা এবং তাদের সহায় সম্পদ সব লুটপাট করেছিল এবং নিজের দেশের জনগণকেও এমন দারিদ্র্যের মধ্যে ফেলে রেখেছিল যে এর ফলে তারাও আপেল কিনে খেতে পারত না বলেই তাদের বুঝ ও প্রবোদ দেওয়ার জন্য ফালতু অন্ত:সারশূন্য বস্তাপচা তথাকথিত বৈজ্ঞানিক এ প্রবাদ বাক্যের প্রচলন ঘটিয়েছিল ব্রিটিশ শাসকরা : "টমেটো গরীব মানুষের আপেল " !!! 
গাযায় ১২০০০ এর অধিক নিরীহ বেসামরিক জনগণকে হত্যা করেছে এবং করেই যাচ্ছে ইসরাইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ( মাযুরা ) , ব্রিটেন অর্থাৎ যুক্তরাজ্য ( যুরা) , ফ্রান্স , জার্মানি , ইতালি ও পশ্চিমা দেশগুলোর সার্বিক মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে এবং সমর্থন পুষ্ট হয়ে । গাযার গণহত্যার মতো তিন শতাব্দী ধরে বিশ্বব্যাপী এ ধরনের জঘন্য গণহত্যা ও প্রজন্ম হত্যা করে বেড়িয়েছে ঐ সব পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন , বেলজিয়াম , হল্যান্ড , ডেনমার্ক। মাযুরার ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) , কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠাই হয়েছে ঐ সব দেশের কোটি কোটি  আদিবাসীকে হত্যা করে । আর ঠিক একই কায়দায় অর্থাৎ গণহত্যা চালিয়েই পশ্চিমারা বিশেষ করে যুরা ( যুক্তরাজ্য বা ব্রিটেন ) ফ্রান্স ও   মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ইসরাইল নামক মেকি কৃত্রিম সন্ত্রাসবাদী আগ্রাসী রাষ্ট্রটির প্রতিষ্ঠা করেছে ১৯৪৮ সালে মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র পশ্চিম এশিয়ার ( মধ্যপ্রাচ্য ) ফিলিস্তীনে যাতে করে মুসলিম ও আরব বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে এ অঞ্চলের তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুণ্ঠন করা যায় ।
অতএব পশ্চিমাদের বিশেষ করে মাযুরা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) ও যুরা (যুক্তরাজ্য) দের এ সব অন্তঃসারশূন্য মাকাল ফল সদৃশ প্রবাদ , ইজম - ফিজম ও মতবাদ - ফতবাদ ঝেড়ে মুছে দূরে ফেলে দিতে হবে ।
ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান,
১৫-১১-২০২৩

captcha